দিনাজপুরের ১৪০ জন চালকল মালিকের নিবন্ধন বাতিল

আমন মৌসুমে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ না করায়, জেলা খাদ্য বিভাগ শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ১৪০ জন চালকল মালিকের নিবন্ধন বাতিল করেছে।

দিনাজপুরে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ না করায় শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে ১৪০ জন চালকল মালিকের নিবন্ধন বাতিল করেছে জেলা খাদ্য বিভাগ। ছবি : বাসস
আজ সকাল ১০ টায় দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে নিবন্ধন বাতিল করা চালকল মালিকের তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এদিকে আমন মৌসুমের শুরু থেকে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় লোকসানের ভয়ে সরকারের সাথে চাল সরবরাহের চুক্তি করেননি বলে জানিয়েছেন নিবন্ধন বাতিল হওয়া চালকল মালিকরা। অন্যদিকে একাধিকবার তাগিদ দিয়েও তাদের চুক্তির আওতায় আনা যায়নি বলে জানিয়েছে জেলা খাদ্য বিভাগ।
খাদ্য বিভাগের সূত্রটি জানায়, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার ৯৯টি নিবন্ধিত চালকল রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি আধুনিক অটো চালকল ও ৮৯টি হাসকিং চালকল। সরকার আমন মৌসুমে চালকল মালিকদের কাছ থেকে খাদ্য সংগ্রহের জন্য ৩৩ টাকা কেজি দরে ধান ও ৪৭ টাকা কেজিতে সিদ্ধ চাল এবং ৪৬ টাকা কেজিতে আতপ চালের দর নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এই দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা শুরু থেকেই খাদ্য গুদামে ধান দিতে অনাগ্রহী ছিলেন। এরপরও খাদ্য বিভাগের নিবন্ধন রক্ষার জন্য ৫৯টি চাল-কলের মালিক লোকসান জেনেও গুদামে চাল সরবরাহ করেছেন।
ফুলবাড়ি উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের মেসার্স আফতার হাসকিং মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আফতার আলী বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় প্রতি কেজি চাল উৎপাদনে ৫০ টাকার বেশি খরচ হয়। এরপরও শুধু চুক্তি থাকার কারণে লোকসান দিয়ে খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করেছি।
সরকার চাইলে প্রণোদনার মাধ্যমে আমাদের এই ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে পারে।’
চুক্তির বাইরে থাকা একাধিক চালকল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এবার সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারেই চালের দাম অনেক বেশি। তাই তারা সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের চুক্তি করেনি। চুক্তি করলে কেজিতে ৫ থেকে ৬ টাকা লোকসান গুনতে হতো। এতে ব্যবসার মূলধনই হারিয়ে যেত। চুক্তির বাইরে থাকা শাহ হাসকিং মিলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল কাইয়ুমও একই কথা বলেন।
ফুলবাড়ী পৌর এলাকার হাসান রাইস অ্যান্ড ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী ও উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি সামসুল হক বলেন, এবার সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে বাজারে চালের দাম অনেক বেশি ছিল। তাই অনেকে চুক্তিবদ্ধ হননি।
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর সরকারি খাদ্য বিভাগে চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করছি। তবে এ বছর অসুস্থতার কারণে চুক্তিবদ্ধ হতে পারিনি।’ তিনি চিকিৎসাজনিত প্রমাণপত্র খাদ্য বিভাগে জমা দিয়েছেন বলে জানান।
এরপরও নিবন্ধন বাতিল করার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে ব্যক্ত করেন।
ফুলবাড়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহেল আহম্মেদ বলেন, আমন মৌসুমে এই উপজেলার ৪০টি চালকলের মালিক চাল সরবরাহের জন্য চুক্তি করেননি। শর্ত ভঙ্গ করায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী এসব মিলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সুবীর নাথ চৌধুরী জানান, জেলায় যে সব অটো রাইস মিল ও হাসকিং মিলের নিবন্ধনভুক্ত মালিক রয়েছেন তাদের অধিকাংশই চুক্তিবদ্ধ হয়ে চাল সরবরাহ করেছেন। অনেকেই চুক্তিবদ্ধ চাল অর্ধেক সরবরাহ করেছেন। বাজারে চালের দাম বেশি হওয়ায় তারা চাল দিতে পারছেন না বলে আবেদন করেছেন।
তিনি আরো জানান, যেসব নিবন্ধন ভুক্ত চাল-কলের মালিক খাদ্য বিভাগে চুক্তি করতে আসেননি,তাদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিবন্ধন বাতিলের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪০ জন চাল কল মালিকের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে তিনি আভাস দেন।
খাদ্য বিভাগ সূত্রটি জানায়, এবারে আমন মৌসুমে জেলার ১৩ টি উপজেলার মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলার ৪০ জন চাল কল মালিক খাদ্য সরবরাহের চুক্তি করেনি। অপর ১২টি উপজেলার মধ্য দিনাজপুর সদরের ৩৫টি বোচাগঞ্জের ১৭টি, বীরগঞ্জের ১৮টি, চিরিরবন্দরের ১২টি, পার্বতীপুরের ১০টি এবং বিরলের ৮ টি চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়নি।
ফলে তাদের নিবন্ধন বাতিল করে নির্দেশ পত্র জারি করা হয়।